ঢাকা ০৫:২৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তিত জমিতে সূর্যমুখী চাষে অপার সম্ভাবনা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৯:৫৮:২৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১ এপ্রিল ২০২৩
  • ৭৮ বার

বাগেরহাটের ফকিরহাটে পতিত জমিতে সূর্যমূখী চাষ করে সাফল্য পেয়েছেন চাষীরা। একদিকে আয় ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে, অন্যদিকে অনাবাদি জমি আবাদ করে লাভবান হচ্ছেন কৃষকেরা। আর কোলেস্ট্রলমুক্ত তেল উৎপাদন করে ক্ষতিকর পামওয়েল ও সয়াবিনের স্বাস্থ্য ঝুঁকি থেকে রক্ষা পাবেন ভোক্তারা।

ফকিরহাট কৃষি অফিস সুত্রে জানা গেছে, সূর্যমূখীর ফলন দেখে তেল জাতীয় ফসল উৎপাদনে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে। চলতি বছর ফকিরহাট উপজেলায় ১৫০ হেক্টর জমিতে চাষ করা হয়েছে সুর্যমুখী ফুলের। এরমধ্যে সরকারি প্রণোদনায় ১০৩০ জন চাষী সুর্যমুখীর চাষ করেছেন ১৩৭ হেক্টর জমি। এসব জমিতে ফলনও ভালো হয়েছে। পতিত জমিতে সূর্যমূখীর এমন ফলন দেখে ও কম পুজি বিনিয়োগে বেশি লাববান হওয়ায় সূর্যমূখী চাষে আগ্রহ বাড়ছে এ অঞ্চলের মানুষের।

ফকিরহাটের লখপুর এলাকার সূর্যমুখী চাষী মোতালেব মোড়ল জানান, সরকারি প্রণোদনার মাধ্যমে বীজ ও সার পেয়ে এবছর প্রথম সুর্যমূখীর চাষ করেছেন তিনি। প্রথমে তেমন আগ্রহ না থাকলেও ফলন দেখে অনেক ভালো লাগছে। প্রতিটি গাছে অনেক বড় বড় ফুল হয়েছে। ফুলের এই মনোরম দৃশ্য দেখতে ও ছবি তুলতে প্রতিদিন ভিড় করছে প্রকৃতি প্রেমিরা। যদি আবহাওয়া ও বাজার ভালো থাকে অনেক টাকা লাভ হবে। তার মতো আরও কৃষক সূর্যমুখী চাষে আগ্রহী হয়েছেন। ভবিষ্যতে আরও বৃহৎ পরিসরে সূর্যমুখীর চাষ করবেন বলে তিনি জানান।

স্থানীয় কৃষক শফিকুল গাজী জানান, ধান ওঠার পর অনাবাদি পড়ে থাকা জমিতে এবছর সূর্যমূখীর বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষি কর্মকর্তাদের কাছ থেকে সূর্যমূখীর তেলের গুনাগুন শুনে ও বাম্পার ফলন দেখে তিনি আগামী বছরও সূর্যমূখী চাষ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

কৃষানী লাভলী আক্তার বলেন, রান্নার জন্য তেলের বিকল্প কিছু নেই। সয়াবিন তেলের দাম যেভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এর স্বাস্থ্য ঝুঁকির কথা শুনে আগামী বছর নিজের জমিতে সূর্যমূখী চাষ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

ফকিরহাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবীদ নাছরুল মিল্লাত জানান, তেল জাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পের আওতায় সরকারের প্রনোদনা ও কৃষিবিভাগের নজরদারীতে পতিত জামিতে সুর্যমূখীর বাম্পার ফলন হয়েছে। সূর্যমুখীর বীজ থেকে উৎপাদিত তেলে লিনোলিক এসিড থাকে যা হার্টের জন্য ভালো। সূর্যমুখী তেলের উৎপাদন বাড়লে মানুষ স্বাস্থ্যসম্মত তেল পাবে, চাষীরাও লাভবান হবেন। কম খরচে বেশি লাভের সুযোগ থাকায় ফকিরহাটের আরও অনেকেই সূর্যমুখী চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের খুলনা অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ মোহন কুমার ঘোষ বলেন, সরকার ভোজ্য তেলের আমদানী নির্ভরতা কমাতে তেল জাতীয় ফসলের চাষাবাদ বাড়াতে নানান পদক্ষেপ নিয়েছে। কৃষকদের প্রণোদনার মাধ্যমে বীজ ও সার এবং প্রশিক্ষন দেয়া হয়েছে। এ বছর ফকিরহাটে সূর্যমূখীর বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রতিটি গাছে ফুল ফুটার পর বাগানগুলো অপরূপ সৌন্দর্য ধারণ করেছে।

এভাবে প্রণোদনার মাধ্যমে পতিত জমিতে তেল জাতীয় ফসল সুর্যমূখীর চাষাবাদের আওতায় আনতে পারলে এক দিকে আয় ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে অন্য দিকে ভোজ্য তেলের আমদানী নির্ভরতা কমবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

তিত জমিতে সূর্যমুখী চাষে অপার সম্ভাবনা

আপডেট টাইম : ০৯:৫৮:২৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১ এপ্রিল ২০২৩

বাগেরহাটের ফকিরহাটে পতিত জমিতে সূর্যমূখী চাষ করে সাফল্য পেয়েছেন চাষীরা। একদিকে আয় ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে, অন্যদিকে অনাবাদি জমি আবাদ করে লাভবান হচ্ছেন কৃষকেরা। আর কোলেস্ট্রলমুক্ত তেল উৎপাদন করে ক্ষতিকর পামওয়েল ও সয়াবিনের স্বাস্থ্য ঝুঁকি থেকে রক্ষা পাবেন ভোক্তারা।

ফকিরহাট কৃষি অফিস সুত্রে জানা গেছে, সূর্যমূখীর ফলন দেখে তেল জাতীয় ফসল উৎপাদনে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে। চলতি বছর ফকিরহাট উপজেলায় ১৫০ হেক্টর জমিতে চাষ করা হয়েছে সুর্যমুখী ফুলের। এরমধ্যে সরকারি প্রণোদনায় ১০৩০ জন চাষী সুর্যমুখীর চাষ করেছেন ১৩৭ হেক্টর জমি। এসব জমিতে ফলনও ভালো হয়েছে। পতিত জমিতে সূর্যমূখীর এমন ফলন দেখে ও কম পুজি বিনিয়োগে বেশি লাববান হওয়ায় সূর্যমূখী চাষে আগ্রহ বাড়ছে এ অঞ্চলের মানুষের।

ফকিরহাটের লখপুর এলাকার সূর্যমুখী চাষী মোতালেব মোড়ল জানান, সরকারি প্রণোদনার মাধ্যমে বীজ ও সার পেয়ে এবছর প্রথম সুর্যমূখীর চাষ করেছেন তিনি। প্রথমে তেমন আগ্রহ না থাকলেও ফলন দেখে অনেক ভালো লাগছে। প্রতিটি গাছে অনেক বড় বড় ফুল হয়েছে। ফুলের এই মনোরম দৃশ্য দেখতে ও ছবি তুলতে প্রতিদিন ভিড় করছে প্রকৃতি প্রেমিরা। যদি আবহাওয়া ও বাজার ভালো থাকে অনেক টাকা লাভ হবে। তার মতো আরও কৃষক সূর্যমুখী চাষে আগ্রহী হয়েছেন। ভবিষ্যতে আরও বৃহৎ পরিসরে সূর্যমুখীর চাষ করবেন বলে তিনি জানান।

স্থানীয় কৃষক শফিকুল গাজী জানান, ধান ওঠার পর অনাবাদি পড়ে থাকা জমিতে এবছর সূর্যমূখীর বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষি কর্মকর্তাদের কাছ থেকে সূর্যমূখীর তেলের গুনাগুন শুনে ও বাম্পার ফলন দেখে তিনি আগামী বছরও সূর্যমূখী চাষ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

কৃষানী লাভলী আক্তার বলেন, রান্নার জন্য তেলের বিকল্প কিছু নেই। সয়াবিন তেলের দাম যেভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এর স্বাস্থ্য ঝুঁকির কথা শুনে আগামী বছর নিজের জমিতে সূর্যমূখী চাষ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

ফকিরহাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবীদ নাছরুল মিল্লাত জানান, তেল জাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পের আওতায় সরকারের প্রনোদনা ও কৃষিবিভাগের নজরদারীতে পতিত জামিতে সুর্যমূখীর বাম্পার ফলন হয়েছে। সূর্যমুখীর বীজ থেকে উৎপাদিত তেলে লিনোলিক এসিড থাকে যা হার্টের জন্য ভালো। সূর্যমুখী তেলের উৎপাদন বাড়লে মানুষ স্বাস্থ্যসম্মত তেল পাবে, চাষীরাও লাভবান হবেন। কম খরচে বেশি লাভের সুযোগ থাকায় ফকিরহাটের আরও অনেকেই সূর্যমুখী চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের খুলনা অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ মোহন কুমার ঘোষ বলেন, সরকার ভোজ্য তেলের আমদানী নির্ভরতা কমাতে তেল জাতীয় ফসলের চাষাবাদ বাড়াতে নানান পদক্ষেপ নিয়েছে। কৃষকদের প্রণোদনার মাধ্যমে বীজ ও সার এবং প্রশিক্ষন দেয়া হয়েছে। এ বছর ফকিরহাটে সূর্যমূখীর বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রতিটি গাছে ফুল ফুটার পর বাগানগুলো অপরূপ সৌন্দর্য ধারণ করেছে।

এভাবে প্রণোদনার মাধ্যমে পতিত জমিতে তেল জাতীয় ফসল সুর্যমূখীর চাষাবাদের আওতায় আনতে পারলে এক দিকে আয় ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে অন্য দিকে ভোজ্য তেলের আমদানী নির্ভরতা কমবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।